Notice! Hello! Dear visitor we are developing our site. For this reason may be you face some problem. We are sorry for that. But we are trying to complete our work quickly. Thank you.

চন্দ্রাবতী ও তাঁর শিবমন্দির

Posted Posted by Tanvir ahmed in Comments 0 comments


    চন্দ্রাবতী ও তাঁর শিবমন্দির
  -ফয়সাল আহমেদ


ছুটির দিনেও নাকি এখন আর অবসর মেলেনা ,সবাই ব্যস্ত যে যার মত কাজের যেন শেষ নেই কারো। সেখানে দূরে কোথাও অবকাশ যাপন সেতো চিন্তারও বাইরে। এরপরেও যারা ভ্রমণপ্রেমি,ইতিহাস সন্ধানী,তারা ঠিক সময় পেলে কিংবা কখনও কখনও সময় করে বেরিয়ে পরে প্রকৃতির রুপ-রহস্য জানতে,ঐতিহাসিক স্থান,স্থাপত্যশৈলী দর্শণে। কিশোরগঞ্জ জেলা সদরের মাইজকাপন ইউনিয়নে রয়েছে তেমনি এক নিদর্শন বাংলা সাহিত্যের আদিকবি চন্দ্রাবতীর স্মৃতিবিজড়িত শিব মন্দির। রাজধানী ঢাকা থেকে সড়ক ও রেল পথে খুব সহজে যাওয়া যায় সেখানে।
ষোড়শ শতকের মনসা মঙ্গলের কবি দ্বিজ বংশীদাসের কন্যা  চন্দ্রাবতী। তাঁর মায়ের নাম সুলোচনা। কালজয়ী এই মহিলা কবির জন্ম বর্তমান কিশোরগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার মাইজকাপন ইউনিয়নের পাতুয়াইর গ্রামে। কবি চন্দ্রাবতীকে বলা হয়ে থাকে বাংলা ভাষার প্রথম মহিলা কবি। অবশ্য ড. আহমদ শরীফের মতে চন্দ্রাবতী সম্ববত বাংলা ভাষায় দ্বিতীয় মহিলা কবি। প্রথম কবি চৈতন্যদেবের কালের মাধবী। কবিতার মাধ্যমে কবি চন্দ্রাবতী    তার নিজের পরিচয় দিয়েছেন এভাবেÑ
‘ধারাস্রোতে ফুলেশ্বরী নদী বহি যায়।
বসতি যাদবানন্দ করেন তথায় ॥                                                        
ভট্টাচার্য ঘরে জন্ম অঞ্জণা ঘরণী।
বাঁশের পাল্লায় তালপাতার ছাউনি ॥
ঘট বসাইয়া সদা পূজে মনসায়।
কোপ করি সেই হেতু লক্ষী ছাড়ি যায় ॥
দ্বিজবংশী বড় হৈল মনসার বরে।
ভাসান গাইয়া যিনি বিখ্যাত সংসারে’ ॥
চন্দ্রাবতীর রচনা আজ সারাবিশ্বে আলোচিত। পৃথিবীর একুশটি ভাষায় তাঁর লেখা অনুদিত হয়েছে। এখানেই থেমে নেই, কবি চন্দ্রাবতীর রচনা নিয়ে গবেষণা হচ্ছে পৃথিবীর নানা দেশে। বিদেশী গবেষকবৃন্দ প্রায়ই আসছেন কবির তীর্থভূমি কিশোরগঞ্জে। অসাধারণ প্রতিভাময়ী এই কবি ছিলেন পরমা সুন্দরী। ছিলেন রোমানন্টিক মনের অধীকারীও। ভালবাসতেন শৈশবের সাথী জয়ানন্দ নামের এক ব্রাহ্মণ যুবককে। এক পর্যায়ে তাঁদের বিবাহের প্রস্তুতিও চলে। কিন্তু জয়ানন্দ এক মুসলমান নারীর প্রেমে পড়ে ধর্মান্তরিত হন। ভেঙ্গে যায় চন্দাবতীর হৃদয়। এমন অবস্থায় তিনি পিতা দ্বিজ বংশীদাসের কাছে দুটি প্রার্থনা করেনÑএক ফুলেশ্বরী নদীর তীরে মন্দির স্থাপন, অন্যটি হলোÑচিরকুমারী থাকার ইচ্ছাÑ
চন্দ্রবতী বলে ‘পিতা সম বাক্য ধর।
জন্মে না করিব বিয়া রইব আইবর ॥
শিবপুজা করি আমি শিবপদে মতি।
দুঃখিনীর কথা রাখ কর অনুমতি’ ॥
অনুমতি দিয়া পিতা কয় কন্যার স্থানে।
‘শিবপুজা কর আর লেখ রামায়নে’ ॥
ফুলেশ্বরী নদীর তীরে শিবমন্দির স্থাপনের পরে শিবপুজা আর রামায়ন লেখায় ব্যাস্ত হয়ে পরেন  চন্দ্রাবতী। এক সময় জয়ানন্দ তাঁর ভুল বুঝতে পেরে চন্দ্রাবতীকে এক নজর দেখার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করলেন। পিতার অনুমতি না থাকায় চন্দ্রাবতী জয়ানন্দকে সাক্ষাত দিতে পারেননি। ব্যার্থ জয়ানন্দ চন্দ্রার মন্দিরের কপাটে ফুলের রস দিয়ে লিখেন -
‘শৈশব কালের সঙ্গি তুমি যৌবনকালের সাথী ।
অপরাধ ক্ষমা কর তুমি চন্দ্রাবতী’ ॥           
পরে চন্দ্রাবতী মন্দিরের কপাট খুলে জয়ানন্দের এ লেখা দেখতে পান। উক্ত লেখা ধুয়ার জন্য নদীর ঘাটে জল আনতে গিয়ে দেখেন নদীর জলে ভাসছে জয়ানন্দের মৃতদেহ। তার পরের ঘটনা- প্রেমিক জয়ানন্দের মৃত্যুতে অনুশোচনায় দগ্ধ চন্দ্রাবতী ও ফুলেশ্বরীর জলে ঝাঁপিয়ে পরেন। আবার কারো কারো মতে জয়ানন্দের মৃত্যুর অল্প কিছুদিন পরেই অনুতপ্ত চন্দ্রাবতী দেহত্যাগ করেন। আজ চন্দ্রাবতী নেই, নেই এক সময়ের খরস্রোতা নদী ফুলেশ্বরী ও কিন্তু নদী তীরে প্রতিষ্ঠিত শিবমন্দিরটি ঠিক দাঁড়িয়ে আছে কালের সাক্ষী হিসেবে।  এটিকে এক নজর দেখার জন্য দেশের নানা প্রান্ত থেকে প্রতিদিন দর্শণার্থীরা আসেন।
মন্দির সংলগ্ন স্থানে স্থাপিত হয়েছে কবি চন্দ্রাবতী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয় মাঠে প্রতি বছর বৈশাখ মাসের এক তারিখ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। কবি চন্দ্রাবতীর স্মৃতিকে ধরে রাখার উদ্দেশ্যে এলাকার তরুণদের উদ্যোগে গড়ে তোলা হয়েছে চন্দ্রাবতী স্মৃতি সংসদ।
 স্থানিয় বাসিন্দা আব্দুল হেকিম (৬০) বলেন শতশত বছরের এই পুরান কাহিনির বিষয়ে আমরা বেশি জানিনা ,তবে জানা দরহার। শিব মন্দিরের উন্নয়ন কাজ সম্পর্কে তিনি বলেন লোকজন আয়া মাফজোক নিয়া গেছে কিন্তু কাম অহনও শুরু অইছেনা ।
শিব মন্দিরের পাশের টংদোকানদার হুমায়ুন বলে বিদেশ থাইক্কা লোকজন আয়ে এহানে মন্দির দেখতো কিন্তু কোনো কাম অয়না।
স্থানিয় দৈনিক শতাব্দীর কণ্ঠ পত্রিকার সম্পাদক আহমেদ উল্লা বলেন, দিনে দিনে কবি চন্দ্রাবতীর স্মৃতি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। অনেক উদ্দ্যোগের কথা শুনেছি কিন্তু কাজ হচ্ছে না। জরুরি ভিত্তিতে এর সংস্কার দরকার। সাথে সাথে  কিশোরগঞ্জ জেলা সদর থেকে চন্দ্রাবতীর বাড়ী পযর্ন্ত সড়ক সংস্কার করা প্রয়োজন।
এ সম্পর্কে কথা বলেছিলাম সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকির সাথে তিনি বলেন চন্দ্রাবতীর স্মৃতিবিজড়িত শিব মন্দির ও সংশ্লিষ্ট জায়গার মালিকানা এখন আর্কিওলজি বিভাগের হাতে। সেজন্য ইচ্ছা করলেই সেখানে কোন উন্নয়ন কাজ করা যাচ্ছে না। আমি তাদের সাথে বারবার যোগাযোগ করেছি কিন্তু তাদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সারা পাচ্ছি না । তবে আমি আশা করি খুব শিঘ্রি এর উন্নয়নের কাজে হাত দেওয়া হবে কারণ সে বিষয়ে মানণীয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর আগ্রহ রয়েছে।
সাহিত্যের মাধ্যমে চন্দ্রাবতীকে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন ছোট কাগজ ‘ চন্দ্রাবতী’র সম্পাদক কবি বাসিরুল আমিন তিনি জানান, চন্দ্রাবতীর শিব মন্দির সংস্কার সরকারকে অধিক গুরুত্ব সহকারে নেওয়া উচিত। সরকারের নজর নাথাকায় মন্দিরের অনেক মূল্যবান জিনিস চুরি হয়েছে। দ্রুত চন্দ্রাবতীর স্মৃতিবিজড়িত শিব মন্দির ও সংশ্লিষ্ট এলাকাকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা উচিত।
 

ফয়সাল আহমেদ
কিশোরগঞ্জ।
মোবাইল ঃ ০১৯১৯-৫৮০০৯৩

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Blogroll

Check Page Rank of your Web site pages instantly:

This page rank checking tool is powered by Page Rank Checker service