Notice! Hello! Dear visitor we are developing our site. For this reason may be you face some problem. We are sorry for that. But we are trying to complete our work quickly. Thank you.
Posted Posted by Tanvir ahmed in Comments 0 comments

জয়যাত্রা
ফয়সাল আহমেদ

ইদানিং প্রায়ই মধ্যরাতে ঘুম ভেঙ্গে যায় আমার। কে যেন আমায় ডাকে। আজহার ওঠো, ওঠো আজহার, জেগে ওঠো সমগ্র শক্তি নিয়ে। কোন ভয়ে ভীত হয়ো না আমরা আছি তোমার সাথে- তুমি একা নও আমরা সংখ্যায় অনেক। কে? কে? শব্দ করে ঘুম থেকে জেগে উঠি। দু’ চোখ কচলাতে কচলাতে চারপাশে তাকিয়ে দেখি কেই নেই। পরক্ষণেই আবার চুপষে যাই কারণ আমার চিৎকারে পাশের রুমে ঘুমিয়ে থাকা বাবা মা আবার জেগে না উঠেন। গত ক’দিনের মতো আজ রাতেও গভীর ঘুম থেকে জেগে উঠেছি। শরীর থেকে প্রচন্ড ঘাম ঝড়ছে। রাতে যে টি শার্ট টি গায়ে জড়িয়ে শুয়ে ছিলাম সেটিও দেখি শরিরে নেই। কোথায় গেলো? মশারির ভিতর থেকে হাত বাড়িয়ে পাশে টেবিলের উপরে রাখা ল্যাম্পটি অন করলাম। ল্যাম্পের আলোয় লক্ষ করলাম টি শার্ট টি আমার পায়ের কাছে পড়ে আছে। কিন্তু ঘামছি কেন? এভাবে ঘামার তো কথা নয়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই পাশের রুম থেকে বাবা বলছেন কে? আজহার উঠেছিস? খুব গরম লাগছে না?
তোর রুমের ফ্যানটা বন্ধ ওটা ছেড়ে দে। আজ খুব গরম পড়েছে।
ধারণা করলাম ফ্যানটা বন্ধ থাকার কারণেই শরির এভাবে ঘেমেছে। বিছানা থেকে নেমে ফ্যানের সুইচটা অন করে আবার বিছানায় গেলাম। কিছুক্ষণ এপাশ ওপাশ করে ঘুম না আসায় আবার বিছানা থেকে নেমে টেবিলে বসলাম, ল্যাম্পের সুইচটা অন করতেই চোখে পড়ল মাওলানা আবুল কালাম আজাদ এঁর লেখা-ভারত স্বাধীন হল বইটি। সাম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় তাঁর পূর্ব প্রকাশিত স্বাক্ষাতকার ছাপা হয়। তা পড়েই ঢাকার  নীলক্ষেত থেকে আমি তাঁর লেখা এই বইটি সংগ্রহ করি অত্যান্ত্য আগ্রহ সহকারে।  বইটি পরতে পরতে হঠৎ লক্ষ করলাম- দু’ চোখ ঘুমে জড়িয়ে যাচ্ছে। ল্যাম্পের সুইচটা অফ করে যখন উঠতে যাবো এমন সময় নজরে পড়লো একটি চিঠি। সাদা লম্বা খামের উপরে সংক্ষিপ্ত আকারে লেখা আজহার কান্দাইল,জয়কা, করিমগঞ্জ। খামটা খুলার আগেই ঠিক বুঝতে পারলাম চিঠিটা আতিকের পাঠানো। কিন্তু আতিক! এতদিন পর! শেষ কবে যে যোগাযোগ হয়েছিল তাও মনে নেই। ওই আমার একমাত্র বন্ধু যে কিনা আমার নামের আগে সৈয়দ শব্দটি কখনই ব্যবহার করেনা- কি বলতে কি লিখতে। কতবার বলতাম ওর এক কথা ও সব বংশীয় উপাধি আমার ভালো লাগে না। এসব উপাধি মানুষে মানুষে বৈষম্য তৈরি করে বিভেদ সৃষ্টি হয়। কিন্তু মানুষে মানুষে কোন বৈষম্য - বিভেদ থাকতে পারে না।
হাইস্কুলে ম্যাট্রিক পরীক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠানে আমাকে মানপত্র পাঠ করতে বলা হল। আমি পাঠ করলাম। আর আতিক আবৃত্তি করলো স্বরচিত কবিতা। হাততালি দিয়ে ওকে সবাই অভিনন্দিত করলো অবচেতন ভাবে আমিও । অনুষ্ঠান শেষে যেচে গিয়ে ওর সাথে কথা বললাম।  সেদিন ই আতিকের সাথে আমার প্রথম কথা এবং পরিচয়। তরপর থেকে প্রতিদন কথা হতো। এক সময় আবিস্কার করলাম আমরা দু’ জন খুব কাছের বন্ধু!। মেট্রিক পাশ করে আতিক চলে গেল শহরের কলেজে তার বাবার ইচ্ছায়। সেদিন আমার এবং আমার বাবার ইচ্ছা থাকা সত্যেও আমি শহরের কলেজে ভর্তি হতে পারিনি। তাই বলে আতিকের সাথে আমার যোগাযোগ বন্ধ হয়নি। নিয়মিত চিঠি লিখতো আতিক। মাঝে মাঝে আমিও শহরে গিয়ে আতিককে দেখে আসতাম। ইন্টারমিডিয়েটে আতিক ভালো রেজাল্ট করলো চলে গেলো ঢাকায়। ভর্তি হল বিশ্ববিদ্যালয়ে। আর আমি গ্রাম ছেড়ে শহরের কলেজে অনার্সে ভর্তি হলাম। আতিক অবশ্য চেয়ে ছিলো আমিও যেনো ওর সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি। কয়েকবার ও বলেও ছিল টাকার কথা চিন্তা করিসনা ও সব আমি দেখবো। কিন্তু আমি চাইনি, চাইনি কারণ কারো অনুগ্রহ আমার পছন্দ নয় নিজ যোগ্যতায় যতটুকু হয় তাতেই আমি সন্তুষ্ট।  আতিক ঢাকায় যাওয়ার পর থেকে একটু একটু করে ওর সাথে আমার দূরত্ব তৈরি হতে লাগলো। তবে এ দুরত্ব মনের নয়। মাস ছয়েক পর কলেজ হোস্টেলের ঠিকানায় আমার একটি চিঠি এলো। হাতে নিয়ে দেখি আতিকের চিঠি।
প্রিয় আজহার,
          কেমন আছিস। আনেকদিন হয় তোর সাথে আমার যোগাযোগ নেই। এজন্য মানসিক কষ্ট অনুভব করছি। তাই এ পত্র লেখা। ঢাকায় এসে একটা স্টাডিসার্কেলে যোগ দিয়েছি। ওখানে আমাদের ডির্পাটমেন্টের সাত আট জন ছেলে মেয়ে আছে। ওরা খুব আন্তরিক তাই সহজেই ওদের সাথে আমার সু-সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। ওদের মধ্যে একটি মেয়ে নাম তৃষা ও আমার বিষয়ে খুব আগ্রহী নানা ভাবে আমার সাথে খাতির জমানোর চেষ্টা করছে। বড় লোকের মেয়ে টাকা পয়সা আমাদের চেয়ে কম নয়। বরং অনেক বেশী। আমি চিন্তা করছি ওর সাথে বন্ধুত্ব করবো কিনা ।  তুই কি বলিশ?
শুভ সময় কাটুক।
আতিক
ঢাকা।
আতিকের এই হলো এক স্বভাব হঠাৎ চিঠির সমাপ্তি। সব চিঠিতে ও এ রকমই করে। মনে হয় কবি গুরুর ছোট গল্পের সংজ্ঞার মতো- শেষ হইয়াও হইলো না শেষ। চিঠি দিয়েছে ঠিক কিন্তু ঠিকানা লেখা নাই কিভাবে উত্তর দেই। পরীক্ষার চাপে আবার ভুলে গেলাম আতিকের কথা। যেমন টা হয় চোখের আড়াল হলে। পরীক্ষা শেষ বাড়ি ফিরবো তাই ব্যাগ গুছাচ্ছি। এমন সময় আমার রুমমেট একটি খাম হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল আজহার তোমার চিঠি।
চিঠি?
চিঠিটা আতিকের।
প্রিয় আজহার
          ঠিকানা দেইনি বলে উত্তর দিতে পারিশনি সে আমি জানি। সত্যি বলতে কি আমার নির্দিষ্ট কোন ঠিকানা নেই আজ এখানে তো কাল ওখানে। তোর মত আমার হয়তো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণের সৌভাগ্য নেই। যে কারণে প্রথম বর্ষ পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ ও হলো না। সুযোগ হলনা বলতে আমি ইচ্ছা করে অংশ গ্রহণ করিনি।  চিঠির এ পর্যন্ত পড়ে তুই নিশ্চই কষ্ট পেয়েছিস খুব! আমি জানি তুই কষ্ট পাবি কারণ তুই আমাকে ভালোবাসিস। আমি কমিউনিস্ট আনন্দোলনের সাথে জড়িত একটা গ্রুপের সাথে যোগ দিয়েছি। ও আর একটা কথা , বোধ করি তৃষা নামের মেয়েটি আমার জীবনের সাথে জড়িয়ে যাচ্ছে। আর অবচেতন ভাবে আমিও তার জীবনের সাথে।
শুভ কামনা রইল
আতিক ।
চিঠিটা পড়ে আমি অবাক হয়ে গেলাম। একি করলো আতিক, শেষ পর্যন্ত পড়াটা ছেড়েই দিলো! যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া শতশত তরুণের স্বপ্ন সেখানে আতিক বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে চলে যায় অজানা এক দেশ মাতৃকার টানে। একি ভাবে সম্ভব। আমার হাত পা নিস্তেজ হয়ে আসে। বিছানায় গা এলিয়ে দেই। যখন জেগে উঠি তখন আর বাড়ি যাওয়ার সুযোগ নেই। কারণ তখন দিন গড়িয়ে গভীর রাত।
পরদিন সকালে বাড়ি গেলাম।  প্রায় মাস খানেক পর ফিরে এলাম হোস্টেলে এর মাঝে আতিকের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলাম। কিন্তু আমার সমস্ত চেষ্টা ব্যর্থ হয়। কোন ভাবেই ওর সাথে যোগাযোগ করা গেলো না। দিন যায় রাত যায় সময় এগিয়ে যায় অজানার পথে- প্রায় ছয় মাস পর আতিকের আরো একটি  চিঠি পাই আমি। খামটা খুলে চিঠিটা পড়তে শুরু করলাম।
বন্ধু আজহার
          ভালো আছিস। খাম দেখে নিশ্চই বুঝতে পেরেছিস চিঠিটা আমার লেখা। এখনও চিঠি লেখাতেই আছি । যাদের সাথে যোগাযোগের প্রয়োজন পরে তাদের চিঠি লিখি। না সহজ লভ্য হওয়ার পরেও মুঠোফোন আজও সংগ্রহ করিনি। কেন জানি এই যন্ত্রটার প্রতি আমার কোন আগ্রহ তৈরি হয় না। গত মাসে তৃষা নোকিয়া ঘ-৭০ সিরিজের একটি মুঠোফোন সাথে তিনটি অপারেটরের তিনটি সিম ও একটি লাল গোলাপ আমার ঠিকানায় পাঠালো। সাতদিন আগে শুধু ফুলটি রেখে মুঠোফোনের প্যাকেটটি ফেরত পাঠিয়েছি। তাতে তৃষা খুব দুঃখ পেয়েছে, সেকথা চিঠিতে লিখে আমাকে জানিয়েছে। আমিও জানতাম সে দুঃখ  পাবে কিন্তু আমি অপারগ যে দেশের কোটি মানুষ খোলা আকাশের নিচে নির্ঘুম রাতকাটায় খেতে না পেয়ে অভুক্ত থাকে, ক্ষুধার্থ মায়ের বুক থেকে দুধ খেতে না পেয়ে চিৎকার করতে করতে শিশুটি সেই মায়ের বুকে আবার ঘুমিয়ে পড়ে সে দেশে আর যাই হোক আমি অন্তত  হাজার টাকার দামি মুঠোফোন ব্যবহার করতে পারি না। মানুষের মুক্তির জন্যে যে যুদ্ধে নেমেছি সেই যুদ্ধে যদি সফল হই তাহলে অবশ্যই অন্য সবার মত আমিও একদিন এসব ব্যবহার করবো। এতোদিনে নিশ্চই তোর মনে প্রশ্ন জেগেছে আমি কোথায়? চিন্তা  করিস না  আমি আছি মানুষের মাঝে। মানুষের সাথে লড়াই আর সংগ্রামে।
ভালো থেকো বন্ধু
আতিক ।
সেদিনের সেই চিঠির পর কয়েক বছর পেরিয়ে আজ আবার পেলাম আতিকের চিঠি। কিন্তু আতিকের চিঠি এসেছে একথা আমাকে আগে কেউ বলেনি কেন? মধ্য রাতে আমাকে আতিকের চিঠির কথা জানতে হয়। যার চিঠির প্রতি আমার এত আগ্রহ সেই চিঠি কেন নীরবে টেবিলে পড়ে থাকবে। আতিকের চিঠি এসেছে বাবা-মা-অনিক কেউ আমাকে একথা জানাতে পারলো না ? আমার আর তর সইছে না তারা তারি খামটি খুলে চিঠিটি পড়তে শুরু করলাম।
প্রিয় সুহৃদ
আজহার
আর কত ঘুমিয়ে থাকবি, এবার জেগে ওঠ । এই ধরায় এত বৈষম্য অনাচার দেখেও কি তোর ঘুম ভাংগে না। জেগে উঠ আজহার সমগ্র শক্তি নিয়ে। শ্রেণীহীন শোষিত মানুষের পাশে এসে দাঁড়া । না হয় অপরাধী হয়ে থাকবি আজীবন। কোন ভয়ে তুই ভীত হোসনা। আমরা অনেক, জয় আমাদের হবেই।
এই প্রত্যাশায় তোর প্রিয় বন্ধু
আতিক ।


ফয়সাল আহমেদ- গল্পকার, সংগঠক, কিশোরগঞ্জ।
Foysal84@gmail.com

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Blogroll

Check Page Rank of your Web site pages instantly:

This page rank checking tool is powered by Page Rank Checker service